বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থার ওয়েবসাইটে বুধবার সেরা একাদশের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ।
বরাবরের মতো গত বছরও মুস্তাফিজ ইনিংসে শুরুর মতো ডেথ ওভারেও ভীষণ কার্যকর বোলিং উপহার দিয়েছেন। ২০ ম্যাচ খেলে তিনি উইকেট নিয়েছেন ২৮টি, ১৭.৩৯ গড়ে। তার বিপক্ষে রান নিতে বেশ ভুগতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। তার স্ট্রাইক রেটেই যার প্রমাণ, মাত্র ৭.০০।
২০২১ সালের সেরা এই একাদশে সর্বোচ্চ তিন জন করে আছে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার। অস্ট্রেলিয়ার একজন করে বোলার ও ব্যাটসম্যান। আর ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার আছে একজন করে। টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল ভারত থেকে জায়গা পাননি কেউ।
মোহাম্মদ রিজওয়ান
একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে স্পর্শ করেন এক হাজার রান। ২৯ ম্যাচে এক হাজার ৩২৬ রান ৭৩.৬৬ গড়ে ও ১৩৪.৮৯ স্ট্রাইক রেটে। এমন চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পেছনেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেমি-ফাইনালে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার, করেছিলেন আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।
ব্যাট হাতে ২০২১-এ সতীর্থের মতোই আলো ছড়িয়েছেন বাবর আজম। সেরাটা যেন রেখে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের জন্য, যেখানে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান করেন তিনি। সারা বছরে ২৯ ম্যাচ খেলে ৩৭.৫৬ গড়ে তার রান ৯৩৯। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আলাদা করেও নজর কাড়েন তিনি। তাই বর্সসেরা একাদশেও নেতা করা হয়েছে তাকে।
পাকিস্তান থেকে জায়গা পাওয়া তৃতীয় জন হলেন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে তাদের অধরা জয়ের স্বপ্ন পূরণে সুরটা তিনিই বেঁধে দিয়েছিলেন। সারা বছরে এই সংস্করণে ২১ ম্যাচে ২৩ উইকেট নেন ২১ বছর বয়সী এই পেসার, ২৬.০৪ গড়ে এবং ওভারপ্রতি ৭.৮৬ রান দিয়ে।
আপন মহিমায় ২০২১ সালে দারুণ সফল ছিলেন ফিনিশার ডেভিড মিলার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শারজাহতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলের খুব প্রয়োজনের মুহূর্তে নিজের ছাপ রেখেছিলেন; শেষ ওভারে দুটি ছক্কাসহ ১৩ বলে ২৩ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। বছরে ১৭ ম্যাচে ৪৭.১২ গড়ে করেন ৩৭৭ রান, ১৪৯.৬০ স্ট্রাইক রেটে।
মিচেল মার্শ
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মার্শ। ২০ ওভারের ক্রিকেটে তার নতুন রূপে যাত্রার শুরু গত বছরেই, গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে। মূল ব্যাটসম্যানদের কয়েকজন না থাকায় তিন নম্বরে খেলার সুযোগ দেওয়া হয় তাকে। তিনি তা লুফে নেন দুহাতে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে করেন তিনটি ফিফটি। পরে বাংলাদেশ সফরে ভীষণ ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে তিনি ছিলেন দুই দল মিলিয়ে অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
পরে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে করেন ঝড়ো ফিফটি। আর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে তো তিনিই সেরা। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন নায়কের বেশে। ৫০ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় মার্শ খেলেন ৭৭ রানের চমৎকার ইনিংস। প্রথমবারের মতো এই সংস্করণের দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোয় ৬ ম্যাচে ৬১.৬৬ গড় ও ১৪৬.৮২ স্ট্রাইক রেটে মার্শ করেন ১৮৫ রান। সারা বছরে ২১ ম্যাচে তার রান ৬২৭, ৩৬.৮৮ গড়ে। বল হাতে ৮ উইকেটও নেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
আর হেইজেলউড অনেকের মতে টেস্ট স্পেশালিস্ট হলেও গত বছর টি-টোয়েন্টিতে উজ্জ্বল ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে অন্যতম সেরা অস্ত্র ছিলেন তিনি। বছরে ১৫ ম্যাচে ১৬.৩৪ গড়ে নেন ২৩ উইকেট। ওভারপ্রতি রান দেন কেবল ৬.৮৭।
ইংল্যান্ডের জস বাটলার মূলত কিপার-ব্যাটসম্যান হলেও বছর জুড়ে দাপুটে ব্যাটিং উপহার দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে। বছরের শুরুটা তিনি করেন ভারত সফরে অপরাজিত ৮৩ ও ৫২ রানের দারুণ দুটি ইনিংস খেলে। সেই ফর্ম তিনি ধরে রাখেন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ছোটে রানের ফোয়ারা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ায় বিপক্ষে রান তাড়ায় খেলেন ৩২ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস। ১২৬ রানের লক্ষ্য ইংল্যান্ড পেরিয়ে যায় ১১.৪ ওভারেই। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শারজাহর মন্থর উইকেটে ৬৭ বলে ৬টি করে চার-ছক্কায় করেন অপরাজিত ১০১ রান।
মোট ১৪ ম্যাচে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ৫৮৯ রান, ৬৫.৪৪ গড়ে। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বর্সসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের লড়াইয়েও চার জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন তিনি।
ভানিন্দু হাসারাঙ্গা
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স উপহার দেন হাসারাঙ্গা। ১৬ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। গড়েন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাট হাতে খেলেন ৭১ রানের ইনিংস।
শারজাহতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার দেশের যা প্রথম।
বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি একাদশ: জস বাটলার (ইংল্যান্ড), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটকিপার-পাকিস্তান), বাবর আজম (অধিনায়ক-পাকিস্তান), এইডেন মারক্রাম (দক্ষিণ আফ্রিকা), মিচেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া), ডেভিড মিলার (দক্ষিণ আফ্রিকা), তাবরাইজ শামসি (দক্ষিণ আফ্রিকা), জশ হেইজেলউড (অস্ট্রেলিয়া), ভানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা), মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ), শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান)।