সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ ধরে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিষয়টিকে দাসত্বের সঙ্গে তুলনা করে মান্না বলেন, “উনি বলছেন, আমি পদত্যাগ করতে পারি যদি সরকার বলে। ভাবতে পারেন! কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্ষমতা নেই সরকারের অনুমতি ছাড়া এমনকি পদত্যাগ করার। এতই দাসের দাস!”
উপাচার্যের কঠোর সমালোচনা করে মান্না বলেন, “শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশন ধর্মঘট করছে। তারা যে লড়া্ই করছে কীসের জন্য? তারা এখনি বড় কিছু চায়নি। তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়নি, সরকারের পদত্যাগ চায়নি, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ চায়। ভিসি পদত্যাগ করবেন না কেন?”
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের চতুর্থ দিন বিকালে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাতে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এরপরই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়।
শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের মধ্যে বুধবার সকালে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা গালিগালাজ সহ্য করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে।
“এখানে আমার যদি কোনো দোষ থাকে তাহলে তদন্ত কমিটি হবে। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে আমি তাই মেনে নেব।”
উপাচার্যের ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে মান্না বলেন, “ছাত্ররা তার অসাদাচরণ ও দুর্নীতির কারণে তাকে পথের মধ্যে, রোদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখলেও তিনি বলতে পারেন না- আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকতে পারব না।”
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গ ধরে সরকারের সমালোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক বলেন, “শিক্ষাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে? আমাদের এখানে তিনটা থার্ড ডিভিশন, তিনটা থার্ড ক্লাস পাবার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি পাচ্ছেন, ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হচ্ছেন। এই সচিবালয়ে ঢুকে দেখেন সচিবালয়ে সচিব আছেন যিনি তিনটা থার্ডক্লাস পেয়েছেন। মেধার কী কোনো বিকল্প আছে? যার যেখানে যোগ্যতা তিনি সেখানে যাবেন তবেই তো দেশ বলেন, সমাজ বলেন, রাষ্ট্র বলেন সেটা গড়ে উঠবে।
মান্না বলেন, “মন্ত্রীগুলোর চেহারা দেখছেন না। পুরো দেশকে এইভাবে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। প্রশাসনের কোনো যোগ্যতা নেই, কোনো নৈতিকতা নেই, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নাই, তাদের কোনো কাজ করবার ক্ষমতা নেই। তারা দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন কী রকম করে?”
তবে এ অবস্থা থেকে ‘পরিবর্তন আসবে’ মন্তব্য করে বিএনপি নেতাদের এসব বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ারও আহ্বান জানান মান্না।
তিনি বলেন, “আজ হোক, কাল হোক, সে তো যাবেই। যাবার পরে কে আসবে? মানুষ তো জানতে চাইতেই পারে। ওই ছাত্র-ছাত্রীরা অনশন করছে, কিংবা অনশন করেছে কোটা সংস্কারের জন্য, যারা এখন পর্যন্ত নিরাপদ সড়কের আন্দোলন করে, যারা ৩২ পুলিশের চাকরির জন্য আন্দোলন করে…। একেবারে তাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে হবে আমরা যদি ক্ষমতায় যাই তাহলে এসব করব। আপনারা বলেছেন কি আপনারা কী করবেন?”
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রসঙ্গ টেনে মান্না বলেন, দুই বছরের করোনায় সাড়ে তিন কোটি লোক দরিদ্র হয়েছে। এই দরিদ্র্য হ্রাসের জন্য আপনারা কী করবেন? আমি নিজের কথা বলি। আমি যদি ক্ষমতায় যাই, ৬ কোটি মানুষকে একদম নিচে থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দেব।
“ভয় পেলে গেলেন নাকি? ৬ কোটি মানুষকে এক হাজার টাকা করে দিলে ৬ হাজার কোটি টাকা, বছরে লাগবে ৭২ হাজার কোটি টাকা। নাই আমার। সরকারি হিসেবে ব্যাংক এবং ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের হিসাবে যে টাকাটা বিদেশ চলে যায়, সেটা বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকার কম নয়।
“আমি দরিদ্র জনগোষ্ঠী শিক্ষা, চিকিৎসা বিনা পয়সায় দেবে। রাষ্ট্র ও সরকারের টপ প্রায়োরিটি হতে হবে জনগণের কল্যাণ। আপনাদের এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাবে বলে আশা করে, তারা বলুক জনকল্যাণে এগুলো আমরা করব।”
আসাদ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনাসভায় পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, সাবেক ছাত্র নেতা মনিরুজ্জামান বক্তব্য দেন।