“আমরা বিআরটিএকে ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখব; না হলে কঠোর সিদ্ধান্তে যাব,” বলেন তিনি।
Published : 11 Jan 2025, 09:24 PM
নিজেদের কর্মতৎপরতা না বাড়ালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) বিলুপ্ত করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুব স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছি- তারা যে আচরণ করছে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদেরকে আমি এও বলেছি, সরকারের অনেক দপ্তর কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটাও বলেছি বিআরটিএর পারফরমেন্সে যদি ইম্প্রুভমেন্ট (উন্নতি) না হয়, আমরা এটিকে বন্ধ করে দেওয়ার কথা চিন্তা করব।”
শনিবার ঢাকার বনানীতে বিআরটিএর কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন উপদেষ্টা । পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।
সংস্থাটির কার্যক্রমে ‘কিছুটা উন্নতি’ হলেও তা ‘গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়নি’ বলে মনে করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমরা বিআরটিএকে ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখব। না হলে কঠোর সিদ্ধান্তে যাব। তারা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নতি করবে। বিআরটিএকে যে একমাসের সময় দেওয়া হয়েছিল, তাতে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের উন্নতি না হলেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।”
লাইসেন্স, ফিটনেস টেস্ট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিআরটিএর বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
‘দুর্ঘটনা বেড়েছে’
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যের বরাতে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য ও উপাত্ত আমাদের দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় গত এক বছরে ৭ হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ১২ হাজারের বেশি। এটা এর আগের বছরের একই সময় থেকে ১২ শতাংশ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনা আমরা কমাতে পারি নাই বরং প্রাণহানি বেড়েছে, এজন্য আমরা এটার দায়িত্ব গ্রহণ করছি।”
দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ”আমাদের অপরাধ স্বীকারের একটা বিষয় হিসেবে যারা সড়কে আহত-নিহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার্থে আইন অনুযায়ী অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি।
ফাওজুল কবির বলেন, “দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বিআরটিএর যারা আছে তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। কারিগরি ত্রুটি বা মানুষ হয়ত অসুস্থ হয়ে পড়েছে…এই জাতীয় দুর্ঘটনা ছাড়া গাড়ির ফিটনেস নেই, চালকের লাইসেন্স নেই- এইসব দুর্ঘটনার জন্য বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরাসরি দায়ী করা হবে। আইনানুগ ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে।”
‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে’
চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার কাজও হচ্ছে বলে তুলে ধরেন উপদেষ্টা। বলেন, “আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল। এখন থেকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থাটা আরও সহজ করা হবে, ফলপ্রসূ করা হবে। যারা নিরাপদে চালাতে পারবেন, তাদেরই লাইসেন্স দেওয়া হবে।”
চালকদের প্রশিক্ষণে জোর দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিআরটিসি, এসিআইপি, পুলিশসহ যাদের এসব ট্রেনিং স্কুল আছে, সেখানে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা করব। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এবং এর যাতে একটা গুণগত মান থাকে সে ব্যবস্থাও করব।”
লাইসেন্স দেওয়ার আগে চালকদের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলছেন তিনি।
“ড্রাইভারদের আই টেস্ট, ডোপ টেস্ট এগুলোর ওপরও জোর দিব। এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আমরা সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করব। সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বাকি আছে, আগামী মার্চের মধ্যেই সবগুলো ইস্যু হয়ে যাবে। গাড়ির মালিকানা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও সহজ হবে।”
‘ফিটনেস টেস্টে কড়াকড়ি’
যানবাহনের ফিটনেস সনদ নিয়ে আরও কড়াকড়ি আরোপের কথা নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “গাড়ির ফিটনেস নবায়নের ক্ষেত্রেও আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নবায়নের সময় হলে বিআরটিএ থেকে হয়ত ১৫ দিনের একটা সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে যিনি করাবেন না, তাকে আরেক দফা নোটিস দেওয়া হবে, এরপর কেউ না আসলে তার ফিটনেস সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে। এটা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। আপনার ফিটনেস নাই, আপনি সড়কে থাকতে পারবেন না।”
বিআরটিএর কার্যালয়ে এ বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন, আইজিপি বাহারুল আলম উপস্থিত ছিলেন।