মিন্টু চোধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2016-06-05 19:06:06 BdST
একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুনের খবর চট্টগ্রামবাসীর কাছে যেমন বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে, তেমনি এ হত্যাকাণ্ডে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে।
হত্যার জন্য ‘বিচারহীনতাকে’ দায়ী করে একজন প্রশ্ন তুলেছেন, তবে দেশ কি এখন ‘হন্তারকের?’
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে দুই মাস আগে ঢাকায় আসা বাবুল গত আট বছর চট্টগ্রাম অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশে থাকাকালে তার নেতৃত্বে জেএমবির আস্তানায় অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়। তাদের মধ্যে নেতা পর্যায়ের একজন পুলিশি অভিযানে থাকাবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু
এ হত্যাকাণ্ডের খবর বন্দরনগরীর বাসিন্দাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা, পাড়া-মহল্লায় সকাল থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে।
অনেকেই একে অপরকে অথবা সাংবাদিকদের ফোন করে জানতে চাইছিলেন, কীভাবে এ ঘটনা ঘটল, কেন ঘটল…?
পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন তারা।
নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবসার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবুল আক্তার একজন সৎ ও যোগ্য অফিসার হিসেবে চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেছেন। পুলিশ অফিসার হলেও তার প্রতি চট্টগ্রামবাসীর ধারণা অন্যরকম।
“তার স্ত্রীর হত্যাকাণ্ড আমাদের পীড়া দেয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যর্থতার কারণে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটছে।”
মিতুর লাশ তোলা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে
নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী নিহতের ঘটনা জনমনকে এতটা ব্যথিত করতে পারে তা কল্পনাই করা যায় না। এতে প্রমাণ হয়, পুরো পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি যখন তলানিতে সেখানে একজন বাবুল আক্তার নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম।”
চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সততার জন্য এতো মূল্য দিতে হয়! এ ঘটনার পর ভবিষ্যতে আর কেউ বাবুল আক্তার হতে চাইবে না।”
জনকল্যাণে সম্পৃক্ত সবার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “তা না হলে ভবিষ্যতে জনকল্যাণমূলক কাজ কেউ আর ঝুঁকি নিয়ে করতে চাইবে না।”
এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দার ঝড় বইছে ফেইসবুকেও। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ঢাকার বাসিন্দা রুহুল রানা ফেইসবুকে লিখেছেন, “একজন মাকে হারালাম আজকে। তিনি সাতসকালে তার সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কাপুরুষের দল একজন পেশাদার পুলিশ অফিসারের স্ত্রীকে মেরে দিল। .....বাবুল আক্তার সব পেশা, শ্রেণি ও সাধারণের জন্য কাজ করতেন। এখন আমরা তার জন্য কী করতে পারি!’
“এ দেশ কি আমাদের? নাকি বিচারহীনতার সুযোগে দুর্বৃত্তদের?’’
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর অনেকটা একই কায়দায় হামলা নিহত হয়েছেন চারজন ব্লগার-প্রকাশক। এরমধ্যে খুন হয়েছেন দুই বিদেশি। হত্যা করা হয়েছে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু ধর্মীয় নেতা ও ভিন্নমতাবলম্বী মুসলমানকে।
ঘটনাস্থল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তোলার সময় এক স্বজনের কান্না।
এ প্রেক্ষাপটে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুনে দেশে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক কুতুব উদ্দিন।
ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, “যেখানে একজন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে কাপুরুষরা খুন করতে পারে সেখানে আর কে নিরাপদ? রাষ্ট্র কি এর জবাব দিতে পারবে?’’
ফেইসবুকে বাবুল আক্তারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামে দীর্ঘ দিন তার কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে আসা সাংবাদিকদের অনেকে।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কামাল পারভেজ লিখেছেন, “দুঃখিত বাবুল ভাই। আপনি লাখ লাখ মানুষের জীবন নিরাপদ করতে জানবাজী রেখেছেন। কিন্তু আমরা আপনার পরিবারের নিরাপত্তা দিতে পারলাম না। আপনার মতোই আমাদেরও বুক ভেঙে গেছে। এতটা কষ্ট!’’
সময় টিভির চট্টগ্রাম প্রধান কমল দে লিখেছেন, “স্যরি বাবুল ভাই... নিজের বোন মারা গেলে হয়তো এতটা কষ্ট পেতাম না... এখন যতটা পাচ্ছি।’’
মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মূল ঘাঁটি চট্টগ্রামের হুজুরদের সমালোচনা করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী।
“একটা মোল্লাও চট্টগ্রামের জঙ্গিবিরোধী সাহসী এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে কাপুরুষোচিত হত্যার নিন্দা করবে না। কারণ রসুনের গোঁড়া সব এক জায়গায়! এই মোল্লারা তাদের ধর্মটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ভাবতেও পারছে না।
“এরপর এটিকে শান্তির ধর্ম দাবি করলে মানুষ হাসবে। আর এভাবে মানুষ খুন করে তারা জিততে পারবে না। কারণ দেশের মানুষ এসব খুনিদের বিপক্ষে। এই ধর্ম ব্যবসায়ী খুনিদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েই মানুষ স্বাধীন করেছে এই দেশ।”