ফারুখ আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2019-01-25 15:55:22 BdST
বাইক্কাবিল ঘুরে এসে সেই অভিজ্ঞতার কথাই জানাচ্ছেন লেখক।
বাস থেকে নেমে বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। বেকায়দা যাকে বলে, ঠিক তাই। রাত তিনটায় শ্রীমঙ্গল চৌমনায় নামিয়ে দিল বাস শ্যামলি।
একটি মিষ্টির দোকান আর অনেকগুলো সিএনজি অটোরিকশা তারপাশে দাঁড়িয়ে। মিষ্টির দোকানে ঢুকে দেখি এত রাতেও তারা পরোটা ভাজছে। সঙ্গে তাদের চায়ের আইটেম চালু।
একটা পরোটার সঙ্গে এককাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে এক সিএনজি অটোরিকশা চালকের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেই।
গভীর রাত হলেও ভয়ের কিছু নেই, অভয় দেন দোকান মালিক। চা পরোটা খেয়ে সেই অভয়ে আমিও চড়ে বসি সিএনজি চালিত অটোরিকশায়। তারপর ঠকঠকে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে রওনা হই রাধানগরের কাছে সাজু রহমানের হিমাচল রিসোর্টে।
ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে। নাস্তা খেলাম কেয়ারটেকার কাম বাবুর্চি রিনাদির হাতের রান্না করা খিচুড়ি দিয়ে। তারপর বের হলাম চা ও রাবারবাগান-সহ শ্রীমঙ্গল শহর দেখতে।
ঘুম ভাঙে সুকুমারের মোবাইল ফোনে। আমরা যখন পথে নামি তখন সকাল আটটা। সেদিন নাস্তা করি পানশি রেস্টুরেন্টে। তারপর হাইওয়ে ধরে ছুটে চলা।
এরইমধ্যে অটোরিকশা পিচের পথ ছেড়ে মেঠোপথ ধরে চলা শুরু করেছে।
বাইরে তাকাতেই চোখ থেকে ঘুম পালালো। রাস্তার দুপাশেই অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ। ভাবলাম শিল্পীর চেয়েও অসাধারণ প্রকৃতির নিজ হাতে তৈরি শিল্পকর্ম। কৃষক ক্ষেতে বীজ রোপনে ব্যস্ত। রাখাল ছেলে গরুর পাল নিয়ে মাঠে চলেছে। দুজন মহিলাকেও দেখলাম মাঠের দিকে যেতে। এমন দৃশ্য আমার সোনার বাংলার যেখানে যাই সেখানেই খুঁজে পাই।
এভাবেই এক সময় চলে আসি বাইক্কাবিলে। বিলে ঢোকার আগে টিকিট কাটতে হল। তারপর রং চায়ে চুমুক মেরে হেঁটে চলি করচ বনের ভেতর।
বছরের এ সময় কেমন রুক্ষ্ম প্রকৃতি। গাছগুলো সব ডালপালা ছড়ানো হলেও পাতা শূন্য। তবে এমন পাতার দৈন্যতায়ও বেশ লাগছিল। বরষায় এ জায়গার একটা অপূর্ব আকর্ষণ আছে।
বিলের পানি বর্ষাকালের মতো টইটম্বুর না হলেও বাইক্কাবিল বরাবরের মতো মূগ্ধ করে। ঘাটে দুটি নৌকা বাঁধা থাকলেও পানি কম ও পাখির বিরক্তির কারণ হবে ভেবে ওয়াচটাওয়ারেই রয়ে গেলাম।
বায়নোকুলারে পাখি দেখে প্রায় আধা ঘণ্টা কাটিয়ে নিচে নেমে বিলের পাশ ধরে হাঁটা শুরু করলাম।
বাইক্কাবিল ইতিবৃত্ত
শ্রীমঙ্গল শহরের পূর্বদিকে ২০ মাইল দূরত্বে হাইল হাওড়ের ১০০ হেক্টর জলাশয়ের নাম বাইক্কাবিল। স্থানীয় বড় গাঙ্গিনা জেলে সম্প্রদায় এই বিলের তত্বাবধানে রয়েছে। ২০০৩ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় জলাশয়টিকে একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে বিলটি মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত।
ধলাবালি হাঁস এই বিলের স্থায়ী বাসিন্দা। সারা বছরই পাখিপ্রেমিকরা এখানে এলে এই বুনো হাসটির দেখা পাবেন। এখানে প্রায় ৪০ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেজন্যেই বাইক্কাবিল দেশ-বিদেশের পাখি-বিশারদদের কাছে তীর্থস্থান।
বাইক্কাবিল বেড়াবার খুঁটিনাটি
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে যেতে হবে চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল নেমে সিএনজি চালিত অটোরিকশা কিংবা মাইক্রোতে চেপে বাইক্কাবিল। শুধু বাইক্কাবিল দেখলে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবে। তবে হাতে সময় নিয়ে যাওয়াই ভালো। তাহলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ পুরো শ্রীমঙ্গল ঘুরে আসা যাবে।
শ্রীমঙ্গল থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে। আছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। আবার শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ টি-রিসোর্ট কিংবা রাধানগরের কাছে রয়েছে বিলাসবহুল গ্রান্ড সুলতান ও হিমাচল রিসোর্ট-সহ চাহিদা মতো সব ধরনের রিসোর্ট।
ছবি: লেখক।
ট্যাগ: লাইফস্টাইল বেড়ানো